আজ || রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
শিরোনাম :
  রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডিজাইনকৃত পোশাক নিয়ে ফ্যাশন প্রদ‍‍র্শনী       গোপালপুরে দারোগার মাথা ফাটানোর ঘটনায় ১৬ জনকে জেলহাজতে প্রেরণ       গোপালপুরে দারোগার মাথা ফাটিয়েছে সন্ত্রাসীরা; গ্রেফতার ১০       গোপালপুরে প্রধানমন্ত্রীর ফেয়ার প্রাইজের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ       গোপালপুরে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেনের পদত্যাগ       উত্তর টাঙ্গাইল নূরানী মাদরাসার বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান       গোপালপুরে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উদযাপন       গোপালপুরে নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত       গোপালপুরে পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় শিশু ও নারী নিহত       গোপালপুরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদান    
 


নবাব সিরাজের স্মৃতি সম্বল করে নিঃসঙ্গ জীবন কাটে বেগম লুৎফার

বাংলার প্রাচীন রাজধানী মুর্শিদাবাদের একাল-সেকাল (পর্ব-৯)

অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন : নবাব সিরাজদ্দৌলা হত্যাকান্ডের পর বেগম লুৎফুন্নেছার জীবনে নেমে আসে চরম অন্ধকার। আসুন আমরা দেখে নেই এ মহীয়সী বিধবা নারীর ভাগ্যে কী কী ঘটেছিল। লুৎফা মানে ভালোবাসা, আর নেসা অর্থ স্ত্রী। অর্থাৎ প্রিয়তমা স্ত্রী। নবাব সিরাজ আদর করে লুৎফা ডাকতেন। লুৎফা ছিলেন মূলত ক্রীতদাসী। ইরান দুহিতা। ভিন্ন মতে, কাশ্মীরী ললনা। সেই যুগে ভারতের মুসলিম শাসকদের হেরেমে পারসীয়ান অথবা কাশ্মীরী দাসীর খুব চাহিদা ছিল। কাজেই লুৎফা কাশ্মীরী ছিলেন, এ অভিমত যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন অনেকে।

লুৎফার জন্ম তারিখ বা সন সম্পর্কে ইতিহাস নীরব। সমসাময়িক বিভিন্ন গ্রন্থে বলা হয়, ১৭৪৫ সালের কোনো এক সময়ে আর দশজন বাদীর মতোই লুৎফাকে দিল্লী থেকে মুর্শিদাবাদে আলীবর্দীর হেরেমে আনা হয়। সেই যুগে প্রচলিত রীতিনুযায়ী রাজা, বাদশা বা নবাবদের জেনানা মহলে শত শত দাসীবাদীর ঠাঁই হতো। শাসকদের ভোগদখল অথবা রাজঅন্তপুরে নানা কাজে খাটানো হতো তাদের। লুৎফাকে যখন মুর্শিদাবাদ হেরেমে আনা হয় তখন তিনি কিশোরী তন্বী। দেখতে সুশ্রী। উন্নত নাসিকা, রংয়ে ফর্সা, হালকা গঠনের- তবে দীর্ঘাঙ্গী। নৃত্য ও সঙ্গীতে পারদর্শীতার দরুন অল্প সময়ে নজর কাড়েন সবার। এক পর্যায়ে আলীবর্দীর পতœী বেগম শরীফুনেচ্ছার ব্যক্তিগত বাদী হন তিনি। এভাবে মুর্শিদাবাদের রাজঅন্তপুরে জীবনটা সুখেই কাটছিলো বুদ্ধিমতি লুৎফার।

নবাব আলীবর্দীর পুত্র সন্তান ছিলনা। প্রয়ানের পর কে বাংলার মসনদে বসবে এ দুশ্চিন্তা তাকে পেয়ে বসে। ফয়সালার জন্য দ্বিতীয় কণ্যা আমেনা বেগমের দ্বিতীয় পুত্র কিশোর সিরাজকে প্রাসাদে নিয়ে আসেন। নানা আলীবর্দী আর নানী শরীফুনেচ্ছার অতিশয় আদওে বেড়ে উঠেন সিরাজ। জেনানা মহলে সিরাজের অবাধ গমনাগমণ ছিল। নানীর খাসবাদী লুৎফাকে হেরেমের এক রাজকীয় নাচগানের অনুষ্ঠানে দেখেন সিরাজ। লুৎফার রুপে বিমোহিত হন তিনি। অতঃপর পরিচয় থেকে সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক সীমা অতিক্রম করলে লুৎফাকে সাদীর প্রস্তাব দেন কিশোর সিরাজ। কিন্তু সেই যুগে একজন অবিবাহিত যুবরাজের সাধারণ দাসী বিয়ের রেওয়াজ ছিলনা। বড় জোর উপপতœী হিসাবে ভোগ করতে পারতেন। কাজেই সিরাজ আর লুৎফার অসম প্রণয় বেশিদুর গড়ানোর আগেই নানী শরীফুনেচ্ছা অন্যত্র সিরাজের বিবাহ ঠিক করেন।

১৭৪৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে রাজকীয় ধুমধামের সাথে সিরাজের সাদী মোবারক সম্পন্ন হয়। কণে সেনাপতি মির্জা ইরাজ খানের কণ্যা উমদাত-উন-নেসা। কিন্তু এ বিয়ে সুখের হয়নি। কারণ সিরাজের মন প্রতিনিয়ত দগ্ধ হচ্ছিলো বাদী লুৎফার প্রেম দহনে। তাই সিরাজ নব বিবাহিত পতœী এবং নানা-নানীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দাসী লুৎফার সাথে গোপন অভিসারে লিপ্ত হন। ১৭৫৪ সালের জুন মাসে লুৎফা আর সিরাজের সম্পর্ক প্রকাশ্যে চলে আসে। সিরাজ তখন বাংলার ভাবী নবাব। আলীবর্দী তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরাধিকার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই বাদী আর যুবরাজের অসম সম্পর্ক নিয়ে কেউ কথা তুলতে সাহস পায়নি। এভাবে লুৎফা এক বুক ভালোবাসা নিয়ে সিরাজের হিরাঝিল প্রাসাদে উঠেন। উমদাত-উন-নেসা প্রথম দিকে বেগম শরীফুনেচ্ছার প্রাসাদেই থাকতেন। পরবর্তীতে পিতা মির্জা ইরাজ খানের লালবাগ বাড়িতে চলে যান। তখন থেকে সিরাজের সাথে উমদাত-উন-নেসার স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। কণ্যার প্রতি এ অবহেলায় ক্ষুব্দ ইরাজ খান পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সিরাজ হত্যাকান্ডের পর ১৭৯১ সাল পর্যন্ত বিধবা উমদাত-উন-নেসা জীবিত ছিলেন বলে ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনী’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।

বলা অনাবশ্যক, লুৎফাকে বিয়ের আগে নবাব সিরাজ আরো এক নারীর প্রেমে দগ্ধ হয়েছিলেন। নাম আলেয়া। আলেয়া ছিলেন সিরাজের সেনাপতি মোহন লালের ভগ্নী। মোহন লাল জাতিতে ছিলেন কাশ্মীরী। সেই সময় হিন্দু সমাজে দেবদাসী প্রথা ছিল। রাজকীয় সুযোগসুবিধা, অনুগ্রহ বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় অনেক অভিজাত হিন্দু রাজপরিবার মুসলিম শাসকদের হেরেমে রাজকণ্যা সম্প্রদান করতেন। সম্ভবত আলেয়ার (প্রকৃত নাম জানা যায়না) ভাগ্যেও এমনটি ঘটেছিল। আবার কারো মতে, বর্গী দস্যুদের দ্বারা ইজ্জতহানির পর আলেয়া আর নিজ সমাজে ফিরে যেতে পারেনি। পরবর্তীতে মুসলিম নাম (আলেয়া) নাম ধারণ করে মুর্শিদাবাদে বাইজী পেশা গ্রহন করেন। কারো কারো মতে, আলেয়া রাজনর্তকী ছিলেন। তার নুপুরের ছন্দে বিভোর হন যুবরাজ সিরাজ। আলেয়াকে ভালোবেসে ফেলেন। উপপতœীর মর্যাদা দেন তাকে। পরবর্তীতে সিরাজ লুৎফাকে বিয়ে করলে আলেয়া খাসবাদী হিসাবে হেরেমে চাকরি পান। পলাশী যুদ্ধের পর নবাব সিরাজ হত্যার পর আলেয়াকেও নৃশংসভাবে খুন করেন মীরণ। খোশবাগে আলেয়ার সমাধি রয়েছে। নর্তকী হলেও অপরিমেয় দেশপ্রেম আর সিরাজের প্রতি নিখাঁদ ভালোবাসা আলেয়াকে ইতিহাস স্থায়ী আসন দিয়েছে।

পলাশীর ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধ, নবাব সিরাজের নৃশংস হত্যাকান্ড এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণের ঢামাঢোলে নবাব সিরাজ আর লুৎফার অমর প্রেম ও ভালোবাসা পাঠক কুলে কখনো ঠাঁই পায়নি। নাটক, যাত্রা, সিনেমা, কবিতা আর ইতিহাসের নির্মম পৃষ্ঠা জুড়ে শুধু পলাশী আর পলাশী। ষড়যন্ত্র আর ষড়যন্ত্র। কিন্তু পলাশীর ব্যর্থ নায়কের ভিন্ন দিক অর্থাৎ সামান্য বাদীর প্রতি অগাধ প্রণয় ছাঁই চাপা পড়েছে। কিন্তু লুৎফনেচ্ছা সিরাজ প্রয়ানের পর হাজারো লাঞ্জনা ও দুঃখকষ্ট সয়েও স্বামীর প্রতি ভালোবাসার অসীম দরদ দেখিয়েছেন। সিরাজকে বন্দী করার সময় লুৎফুনেচ্ছাকে শারীরিকভাবে লাঞ্জিত করা হয়। খুবই অপমানজনকভাবে মীরজাফর জামাতা মীরকাশিম লুৎফার শরীর থেকে গহনাপত্র খুলে নেন। সিরাজকে বন্দীর পর সামান্য গরুর গাড়িতে করে মুর্শিদাবাদ আনা হয়। সিরাজকে মীরনের প্রাসাদে আর আর লুৎফাকে সেনাপাহারায় ঘসেটির হাওলায় নেয়া হয়। ‘মোজাফফরনামা’ গ্রন্থের লেখক ‘করম আলী খান, সিরাজের পরিবারের এ কঠিন দিনে মীরজাফর ও তার পুত্র মীরনের আরো একটি নিকৃষ্ট আচরণের বর্ণনা দিয়েছেন। সেটি এরকম, ‘স্বামীহারা লুৎফা যখন শোকে কাতর, বন্দী জীবনের গ্লানিতে দিশেহারা- তখন মীরজাফর প্রথম এবং তদীয় পুত্র মীরণ দ্বিতীয় দফা বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু সিরাজ পতœী অসহায় লুৎফা সেদিন অপরিসীম সাহসের পরিচয় দেন। তিনি বাপ-বেটার এ প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে বলেন, ‘‘যে রাজমহিষী সর্বদা হস্তী পৃষ্ঠে আরোহনে অভ্যস্ত ছিলেন-তিনি এখন গর্দভের পিঠে সওয়ার হতে পারেন না।’’ এ বক্তব্য থেকে নবাব সিরাজের প্রতি লুৎফার গভীর ভালোবাসার প্রমাণ মিলে।

সিরাজ হত্যাকান্ডের পর লুৎফাকে স্বামীর লাশ স্পর্শ করতে দেয়া হয়নি। এমন কি রাতের আঁধারে খোশবাগে অন্তিম দাফনের সময় উপস্থিত থাকার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাই নীরবে চোখের জল ফেলে বন্দী লুৎফাকে সময় পার করতে হয়। সিরাজ হত্যার এক সপ্তাহ পর ঘাতক মীরণ প্রয়াত নবাবের আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকদের নির্বিচারে গ্রেফতার ও প্রাণসংহার শুরু করেন। আলীবর্দীর পতœী শরীফুনেচ্ছা, তদীয় কণ্যা ঘসেটি বেগম, সিরাজ মাতা আমেনা বেগম, সিরাজ পতœী লুৎফুনেচ্ছা, সিরাজ কণ্যা জোহরাসহ পরিবারের সকলকে বন্দী করা হয়। মীরজাফরের নির্দেশে বন্দীদের নানামাত্রার গঞ্জণার পর ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বুড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবিয়ে ঘসেটি আর আমেনাকে হত্যা করা হয়। লুৎফা টানা আট বছর জিঞ্জিরার কারাগারে বন্দী ছিলেন। স্বামীর সমাধি দর্শনের জন্য খুবই উদগ্রীব ছিলেন তিনি। কণ্যা জোহরাকে নিয়ে জিঞ্জিরার কারাগারে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটানোয় স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে তার।

লুৎফা সিরাজের সমাধি দর্শনের জন্য বহুবার মুর্শিদাবাদ দরবারে লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু মীরজাফর, মীরমদন এবং মীর কাশিমের নিকট প্রত্যাখাত হয়। ইতিমধ্যে ১৭৬৪ সালে বক্সার যুদ্ধের পর বাংলার পুরো ক্ষমতা পান ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি। লুৎফা এবার কোলকাতা ইংরেজ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর হয়। সিরাজ হত্যার আট বছর পর জিঞ্জিরার কারাগার থেকে মুক্তি পান লুৎফা। কণ্যা জোহরাকে সাথে নিয়ে মুর্শিদাবাদ ফিরে যান। কিন্তু তত দিনে ভাগীরথীর জল অনেকদূর গড়িয়ে গেছে। মীরণ বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। ইংরেজরা মীরজাফরকে নামিয়ে জামাতা মীরকাশিমকে, আবার মীর কাশিমকে ক্ষমতাচ্যূত করে দ্বিতীয় দফায় মীরজাফরকে মসনদে বসিয়েছেন। এ উЌান পতনের মধ্যেও মীরজাফরের অনুচররা মুর্শিদাবাদে সক্রিয়। তাই মুর্শিদাবাদের কোনো আত্মীয়স্বজন লুৎফাকে আশ্রয় দিতে সাহস পায়নি।

এমতাবস্থায় অসহায় লুৎফা একাই জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেন। মুর্শিদাবাদ শহর থেকে দুই কিলো দূরে ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে খোশবাগের নির্জন সমাধিসৌধে আশ্রয় নেন। সেখানে নবাব আলীবর্দী, বেগম শরীফুনেচ্ছা, ঘসেটি বেগম, আমেনা বেগম, জয়েনউদ্দীন এবং নবাব সিরাজসহ পরিবারের কবর অবস্থিত। তিনি দেখেন সিরাজের কবর অরক্ষিত। বহু কষ্টে সমাধি সৌধের পাশেই জীর্ণ কুটির নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। সিদ্ধান্ত নেন কণ্যা জোহরাকে নিয়ে বাকি জীবন স্বামীর সমাধিসৌধের তত্বাবধান করে কাটাবেন। আমৃত্যূ তাই করেন। ব্রিটিশ সরকার ভরণপোষনের জন্য মাসিক একশ টাকা ভাতা দিতেন। আর নবাব পরিবারের সমাধিসৌধ তত্বাবধানের জন্য বরাদ্দ ছিল তিনশত টাকা। এ সামান্য টাকায়  কায়ক্লেশে দিনাতিপাত করতেন। প্রতি শুক্রবারে ফকির-মিশকিন ও অনাথদের মধ্যে এ টাকার একটি অংশ দানখয়রাত করতেন।

ব্রিটিশ লেখক জন ফস্টার ১৭৮২ সালের মার্চ মাসে সিরাজের সমাধি পরিদর্শনের সময় লুৎফাকে দেখতে পান। তিনি বর্ণনা দিয়েছেন, ‘‘আজ তিনি (লুৎফা) পৃথিবীতে একদম নিঃস্ব। একমাত্র বালিকা কণ্যা অবলম্বন। একখন্ড সাদা বস্ত্রে সারা শরীর ও মাথা অবগুন্ঠন করা। বিচ্ছেদ আর অভাবদারিদ্রতায় স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়েছে। প্রতি সন্ধ্যার আগে স্বামীর সমাধির পাশে আলো জ্বালান। আবার ফজরের নামাজের পর স্বামীর কবর জেয়ারত করেন। পুস্পমাল্য অর্পণ করেন। সেখানে বসে অনেকক্ষন ধর্মগ্রন্থ পাঠ করেন। অশ্রুসিক্ত জলে নিত্য চোখ ভেজান। কখনো উচ্চস্বরে ক্রন্দন করেন। বক্ষস্থলে করাঘাত করতে করতে মাঝেমধ্যে সেখানে অচেতন হয়ে পড়েন। স্বামীর প্রতি এ ভালোবাসা সত্যিই বিরল।’’

ফ্রস্টারের বর্ণনার ক‘মাস পর একদিন খুব ভোরে স্বামীর সমাধিসৌধের পাশেই শোকে অজ্ঞান হয়ে পড়েন লুৎফা। সে জ্ঞান আর ফেরেনি। এভাবে নিঃসঙ্গ জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত প্রয়াত স্বামীর ভালোবাসায় অর্পন করেন লুৎফা। খবর পেয়ে সমাধি পাশে ছুটে আসেন কিশোরী কণ্যা জোহরা। আশপাশের গ্রামবাসিকে ডেকে অনেকটা নিরবে, নিভৃতে স্বামীর সমাধির পাশেই লুৎফাকে দাফন করা হয়।

লুৎফার পরলোকগমনের পর এতিম হয়ে পড়েন হতভাগ্য জোহরা। চৌদ্দকুলে দেখার কেউ ছিলনা। এ দুরাবস্থার মধ্যে সিরাজ তনয়া জোহরাকে মুর্শিদাবাদের এক নিঃস্ব মির্জা পরিবারে বিবাহ দেয়া হয়। অভাব দারিদ্রতার কষাঘাতে জোহরার বংশধররা পরবর্তীতে পূর্ববঙ্গে চলে আসেন। বর্তমান ঢাকা ও খুলনার মির্জারা জোহরার বংশধর বলে জানা যায়। জোহরা ও তার বংশধরের বঞ্চনার কাহিনী আরো মর্মান্তিক। বেদনাদায়ক। সেসব প্রসঙ্গ তুলে কষ্টের পাল্লা নাইবা বাড়ালাম।

প্রতিবেদক : দৈনিক ইত্তেফাকের গোপালপুর সংবাদদাতা, এডিটর, গোপালপুর বার্তা ২৪ ডট কম এবং মধুপুর কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!